কৈলাশটিলা এমএসটিই প্লান্ট সিলেট শহর হতে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। সুরমা নদীর তীরবর্তী ১৪.৯২ একর ভূমির উপর নির্মিত সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের এই অন্যন্য স্থাপনাটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট, যে প্লান্ট হতে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি এলপি গ্যাসের কাঁচামাল ন্যাচারাল গ্যাস লিক্যুইডস (এনজিএল) উৎপাদিত হয়। ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তির প্রয়োগের কারণে এই প্লান্টটি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের গুণাগুণ পরীক্ষার সময় দেখা যায়, এ গ্যাস ক্ষেত্রে মজুদ প্রাকৃতিক গ্যাস হতে উপজাত হিসাবে কনডেনসেট ছাড়াও ন্যাচারাল গ্যাস লিক্যুইডস (এনজিএল) পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সাধারণ কোন গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট দ্বারা এনজিএল আহরণ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট। সেই প্রেক্ষাপটে, কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ক্রয়োজেনিক প্রযুক্তি সংবলিত মোলিকুলার সিভ টার্বো এক্সপান্ডার (এমএসটিই) প্লান্ট স্থাপন করা হয়। ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কারণে গ্যাসের তাপমাত্রা – ৮৭° সেন্টিগ্রেট পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব হয়। এর ফলে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস হতে ৭-৮ ব্যারেল কনডেনসেট ছাড়াও অতিরিক্ত ৮-১০ ব্যারেল এনজিএল আহরণ করা সম্ভব হয়।
১৯৯২ সালে কৈলাশটিলা এমএসটিই প্লান্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের প্রেস কন্সট্রাকশন লিমিটেড ইপিসি ঠিকাদার হিসাবে নিযুক্ত ছিল । ১৯৯৫ সালে এমএসটিই প্লান্টের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় এবং এই বছরেরই ৭ সেপ্টেম্বর হতে এ প্লান্ট হতে উৎপাদন শুরু হয়। এ প্লান্টের গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা দৈনিক ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও গ্যাস কূপগুলি হতে সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে এ প্লান্ট হতে দৈনিক প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস, ৩২০ ব্যারেল হারে কনডেনসেট ও ৩৫০ ব্যারেল হারে এনজিএল উৎপাদিত হচ্ছে।
কৈলাশটিলা এমএসটিই প্লান্ট হতে উৎপাদিত গ্যাসের একটি অংশ জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডে সরবরাহ করা হয়। বাকী অংশ গ্যাস ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া উৎপাদিত এনজিএল ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের অপর স্থাপনা কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টে সরবরাহ করা হয়। কৈলাশটিলা এমএসটিই প্লান্ট হতে কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টে এনজিএল প্রক্রিয়া করে এলপি গ্যাস ও সুপার লাইট কনডেনসেট উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে ১২ মেট্রিক টনেরও অধিক এলপি গ্যাস কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টে উৎপাদিত হচ্ছে। এই এলপি গ্যাস বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের এলপিজি বটলিং প্লান্টে সরবরাহ করা হয়। এলপিজি বটলিং প্লান্টটি কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টের পাশে অবস্থিত। এলপিজি বটলিং প্লান্টের মাধ্যমে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারজাত হয়ে গৃহে ব্যবহাৰ্য্য জ্বালানী হিসাবে বাজারে বিক্রিত হয়।